সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠনগুলোর সঙ্গে মতবিনিময়ে বসছে জাতীয় বেতন কমিশন ২০২৫। আজ সোমবার সকালে সচিবালয়ে একাধিক শিক্ষক সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে পৃথকভাবে বৈঠকে বসবে কমিশন। এতে অংশ নেবেন প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ অন্যান্য প্রতিনিধি।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীন জাতীয় বেতন কমিশন ২০২৫-এর সদস্য সচিব মো. রুহুল আমিন শিকদার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মতামত নিতে আজকের দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। সভাগুলো বাংলাদেশ সচিবালয়ের ১ নম্বর ভবনের ৩১৮ নম্বর কক্ষে অনুষ্ঠিত হবে।
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী আজকের মতবিনিময় সভার সময়সূচি
সকাল ১০টা ৩০ মিনিট থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত: প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সমিতি; সকাল ১১টা থেকে বেলা ১১টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত: বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতি; বেলা ১১টা ৩০ মিনিট থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত: বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি (সহকারী শিক্ষক); দুপুর ১২টা থেকে দুপুর ১২টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত: বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি (প্রধান শিক্ষক); এবং দুপুর ১২টা ৩০ মিনিট থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত: বাংলাদেশ সরকারি কলেজ শিক্ষক পরিষদ।
সভায় সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং মনোনীত প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর নেতারা সমকালকে জানিয়েছেন, তারা আজকের সভায় তাদের বেতন কাঠামো উন্নয়ন এবং ভাতা বৃদ্ধির দাবিগুলো স্পষ্টভাবে তুলে ধরবেন।
বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ শামসুদ্দিন মাসুদ বলেন, আমরা চাই, মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো ১১তম গ্রেডের প্রস্তাবনা যেন হুবহু বাস্তবায়ন করা হয়। বর্তমানে সহকারী শিক্ষকরা যে বেতন পান, তা জীবনযাত্রার ব্যয়ের সঙ্গে কোনোভাবেই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষক সমাজের দীর্ঘদিনের দাবি— পূর্বের মতো তিনটি টাইম স্কেল পুনর্বহাল, বেতনের মূল কাঠামো বাজারমূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নির্ধারণ, টিফিন ও চিকিৎসা ভাতা পুনর্বিবেচনা, শিক্ষা ভাতা বৃদ্ধি এবং ২০টি গ্রেড কমিয়ে ১০ থেকে ১২টি ধাপে নতুন কাঠামো গঠন করা।
সহকারী শিক্ষকদের আরেক সংগঠনের নেতা খায়রুন নাহার লিপি বলেন, আমরা চাই শিক্ষক সমাজের মর্যাদা রক্ষায় পদোন্নতি ও গ্রেড বৈষম্য নিরসন করা হোক। প্রাথমিক স্তরের শিক্ষকরা যে জাতীয় শিক্ষানীতির মূলভিত্তি রচনা করেন, তাদের বেতনও যেন সেই গুরুত্বের প্রতিফলন ঘটায়।
অন্যদিকে প্রধান শিক্ষক সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো প্রশাসনিক দায়িত্বের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পদ মর্যাদা ও বেতন কাঠামো পুনর্নির্ধারণের প্রস্তাব দেবে।
বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সমিতির সভাপতি রিয়াজ পারভেজ সমকালকে বলেন, প্রধান শিক্ষকেরা কেবল শিক্ষাদান করেন না, তাঁরা প্রশাসনিক প্রধান হিসেবেও বিদ্যালয়ে কাজ করেন। তাই পদমর্যাদা অনুযায়ী প্রধান শিক্ষকদের বেতন হওয়া উচিৎ। পাশাপাশি স্কুল পরিচালনার দায়িত্বের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ভাতা কাঠামোও প্রণয়ন করা প্রয়োজন।
প্রধান শিক্ষক সংগঠনের অপর অংশের সভাপতি আলমগীর হোসেন বলেন, বর্তমান কাঠামোয় প্রধান শিক্ষকরা অনেক ক্ষেত্রে সহকারী শিক্ষকের চেয়ে সামান্য বেশি বেতন পান, যা দায়িত্বের ভারের তুলনায় অযৌক্তিক।
শিক্ষক নেতাদের মধ্যে উপস্থিত থাকবেন যাঁরা
দ্বিতীয় দফার তালিকা অনুযায়ী আজকের আলোচনায় অংশ নেবেন—বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম মোস্তাফিজুর রহমান শাহীন, বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মুকুল, প্রধান শিক্ষক সমিতির সভাপতি রিয়াজ পারভেজ, প্রধান শিক্ষক সংগঠনের অপর অংশের সভাপতি আলমগীর হোসেন, সহকারী শিক্ষক নেতা মোহাম্মদ শামসুদ্দিন মাসুদ এবং খায়রুন নাহার লিপিসহ অন্যান্য শিক্ষক প্রতিনিধি।
বেতন কাঠামো প্রণয়নে ধাপে ধাপে মতবিনিময়
জাতীয় বেতন কমিশন ২০২৫ ইতোমধ্যে সরকারি বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের সঙ্গে মতবিনিময় সভা শুরু করেছে। প্রশাসন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুলিশ, প্রকৌশল, কৃষি, তথ্যপ্রযুক্তি এবং বিভিন্ন ক্যাডার ও অধীনস্থ সেবার প্রতিনিধিদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক চলছে।
কমিশন সূত্রে জানা যায়, নতুন বেতন কাঠামোতে ‘কাজের দক্ষতা’, ‘জীবনযাত্রার ব্যয়’, এবং ‘বাজারমূল্যের ওঠানামা’— এই তিনটি মানদণ্ডকে ভিত্তি ধরা হচ্ছে। পাশাপাশি ২০ গ্রেডের বিদ্যমান কাঠামো কমিয়ে ১২ গ্রেডে নামিয়ে আনার প্রস্তাব নিয়ে আলোচনাও চলছে।
বেতন কমিশন প্রধান ইতোমধ্যে জানিয়েছেন, সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য একটি ‘ন্যায্য, বাস্তবসম্মত ও টেকসই’ কাঠামো তৈরিই তাদের মূল লক্ষ্য।
সরকারি প্রাথমিকের শিক্ষক সংগঠনগুলোর নেতারা আশা করছেন, জাতীয় বেতন কমিশন এবার প্রাথমিক শিক্ষকদের বাস্তব চাহিদা বিবেচনায় রেখে কাঠামো প্রণয়ন করবে।
বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমিতির সহসভাপতি নুরুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিক শিক্ষকরাই দেশের শিক্ষার ভিত্তি নির্মাণ করেন। তাদের আর্থিক অনিশ্চয়তা দূর না হলে মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। আমরা বিশ্বাস করি, পে-কমিশন এবার আমাদের কণ্ঠ শুনবে।
সর্বশেষ জাতীয় বেতন স্কেল প্রণয়ন হয়েছিল ২০১৫ সালে, যা ২০১৬ সাল থেকে কার্যকর হয়। দীর্ঘ নয় বছর পর এবার নতুন স্কেল প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন স্তরের সরকারি কর্মচারী সংগঠন ইতোমধ্যে তাদের প্রস্তাবনা জমা দিয়েছে।
শিক্ষক সমাজের মতে, ২০১৫ সালের কাঠামোয় প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন ও পদোন্নতির বৈষম্য দূর হয়নি, বরং নানা জটিলতা তৈরি হয়েছে। এ কারণে এবার নতুন বেতন কমিশনের কাছে তাদের প্রত্যাশা আরও বেশি।
সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, কমিশন আগামী মাসের মধ্যে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা খাতের মতামত সংগ্রহ শেষ করে ডিসেম্বর নাগাদ প্রাথমিক খসড়া রিপোর্ট চূড়ান্ত করবে। এরপর অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে চূড়ান্ত কাঠামো ২০২৬ সালের মাঝামাঝি কার্যকর হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।